লইট্টা শুটকির ভুনা: এক বাঙালি রান্নাঘরের গল্প
সকালের মিষ্টি রোদ জানালা দিয়ে ঢুকছে। রান্নাঘরের কোণে রাখা মশলার বয়ামগুলো সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করছে। মমতার হাতে আজ রান্না হবে এক বিশেষ পদ—লইট্টা শুটকির ভুনা। এই শুঁটকি শুধুই খাবার নয়; এটা তার মায়ের কাছ থেকে শেখা, বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক স্বাদ-স্মৃতি।
শুঁটকি প্রস্তুতির পালা
মমতা প্রথমেই বের করলেন লইট্টা শুঁটকি। মাঝারি মাপের শুঁটকিগুলো দেখতে যেন শুকনো মাছের মতো রূপালি চমক। শুঁটকির মাথা আর লেজ আলাদা করে একটা বাটিতে রাখলেন। এবার বড় হাঁড়িতে পানি গরম করতে দিলেন। পানিতে তেজপাতা আর এক চিমটি লবণ যোগ করলেন, যেন শুঁটকির গন্ধটা নরম আর সহনীয় হয়ে ওঠে।
“এই শুঁটকির গন্ধটাই তো আসল জাদু,” মমতা নিজেই হাসলেন। ফুটন্ত গরম পানিতে শুঁটকি দিয়ে মাঝারি আঁচে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিলেন। এরপর তুলে নিয়ে আরও ১০ মিনিট উষ্ণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন। শুঁটকিগুলো নরম আর পরিষ্কার হয়ে গেছে। এবার হাত দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করলেন।
মসলার সুরম্য আয়োজন
কড়াই চুলায় চাপিয়ে দিলেন মমতা। সরষের তেল ঢেলে অপেক্ষা করলেন তেলটা হালকা গরম হওয়ার জন্য। তেল গরম হতেই তাতে দু’টো তেজপাতা দিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে এক কাপ কুঁচানো পেঁয়াজ ঢেলে দিলেন। পেঁয়াজ ভাজার সময় যে মিষ্টি ঘ্রাণ উঠল, তা যেন রান্নাঘরে বসে থাকা সকালের ঘুমকেও জাগিয়ে দিল।
পেঁয়াজ নরম হতে শুরু করতেই যোগ করলেন এক চা চামচ রসুন বাটা আর আদা বাটা। কাঁচা মরিচও ছুঁড়ে দিলেন কড়াইয়ের মধ্যে। মশলার গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠল। এরপর এল হলুদ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া আর লাল মরিচ গুঁড়োর পালা। “এই মসলাগুলোই তো শুঁটকিকে আসল স্বাদ এনে দেয়,” মমতা মনে মনে ভাবলেন।
শুঁটকি আর মশলার বন্ধুত্ব
মশলা যখন ঠিকঠাক কষানো হলো, তখন শুঁটকির টুকরোগুলো মশলার মধ্যে ঢেলে দিলেন। ধীরে ধীরে শুঁটকি আর মশলা মিশিয়ে দিলেন। কড়াই থেকে তখনই একটা অন্যরকম সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ল।
কিছুক্ষণ কষানোর পর, শুঁটকি আর মশলার মাখামাখি হয়ে গেলে নামিয়ে নিলেন। “এখন আসল মজা শুরু হবে,” বললেন মমতা। শুঁটকিগুলো ব্লেন্ডারে নিয়ে একটু বেটে নিলেন, যেন সব মশলা আর শুঁটকি একেবারে একজায়গায় মিশে যায়।
ভুনা করার মুহূর্ত
পুনরায় কড়াই চুলায় চড়ালেন। তাতে আবার সরষের তেল গরম করলেন। এবার বেটে রাখা শুঁটকি আর মশলার মিশ্রণ ঢেলে দিলেন। আঁচ কমিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে ভাজতে থাকলেন।
সময় গড়িয়ে যায়, আর শুঁটকির ভুনা ভুনা স্বাদ গন্ধ বের হতে থাকে। রান্না যখন প্রায় শেষ, তখন এক চিমটি চিনি দিয়ে দিলেন, যেন ভুনার স্বাদে একটু মিষ্টি টান আসে।
পরিবেশনের আনন্দ
রান্না শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে গেছে। বাড়ির সবাই ভাত নিয়ে অপেক্ষা করছে। মমতা শুঁটকি ভুনা পরিবেশন করলেন গরম ভাতের সঙ্গে। পরিবারের সবাই খেতে বসেছে। শুঁটকির ঘ্রাণ আর ভুনার ঝাঁঝ মিলে ভাত যেন আরও সুস্বাদু হয়ে উঠেছে।
শাশুড়ি হেসে বললেন, “মমতা, তোমার হাতের রান্নায় সত্যিই ম্যাজিক!” মমতা নিজের মনেই হাসলেন। এই শুঁটকির রেসিপি শুধু রান্না নয়, এটি তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া বাঙালিয়ানার এক ছোঁয়া।
এই গল্পের মতো আপনার রান্নার গল্পও হতে পারে সুখময়। আজই বানিয়ে ফেলুন লইট্টা শুঁটকির ভুনা, আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে বসুন। 😊
Add comment