শিমের বিচি দিয়ে ছুরি শুঁটকি ভুনা: এক দুপুরের গল্প
কোনো এক শীতের সকাল। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে সূর্যের মিষ্টি আলো এসে পড়েছে। রত্না দিদি আজ কিছু বিশেষ রান্নার কথা ভেবেছেন। তার বিয়ের পর প্রথম শীতের দুপুরে শ্বশুরবাড়িতে বানানো সেই শিমের বিচি দিয়ে ছুরি শুঁটকির রান্না, যা খেয়ে তার শাশুড়ি বলেছিলেন, “বউমা, তোমার হাতের রান্নায় তো মায়ের স্বাদ!” আজ সেই স্মৃতির মায়া নিয়ে রান্নাঘরে পা রাখলেন রত্না।
রত্নার শ্বশুরবাড়ি কক্সবাজারে, যেখানে শুঁটকি মাছের এক বিশেষ জায়গা রয়েছে। আর ছুরি শুঁটকি তো এখানকার রাজা! আজ রান্না হবে শিমের বিচি দিয়ে ছুরি শুঁটকি ভুনা। আসুন, গল্পের সঙ্গে সঙ্গে শিখে নিই এই রেসিপি।
প্রস্তুতির গল্প
প্রথমেই রত্না শুঁটকি বের করলেন। ছোট ছোট ছুরি শুঁটকি, যা দেখতে অনেকটা রুপালি সরু মাছের মতো। শুঁটকি টুকরো করে কাটলেন। তারপর পুরনো একটি তাওয়া বের করে শুঁটকিগুলো হালকা টেলে নিলেন। রান্নাঘর ভরে গেল শুঁটকির এক ধরনের ঘ্রাণে, যা শুঁটকিপ্রেমীদের কাছে অপূর্ব মনে হয়।
শুঁটকি টেলে নরম করতে ফুটন্ত গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে পরিষ্কার করলেন এবং পানি ঝরিয়ে রাখলেন। এদিকে শিমের বিচি গাছ থেকে পাড়া হয়নি, তবে বাজার থেকে কেনা। সেগুলো ধুয়ে অল্প লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিলেন। সেদ্ধ করার সময় শিমের বিচির গন্ধ পুরো রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ল।
মসলার জাদু
রান্নার মূল পর্যায়ে যেতে এখন প্রস্তুত। রত্না একটা বড় কড়াই চুলায় বসালেন। কড়াইতে সরিষার তেল ঢেলে অপেক্ষা করলেন একটু ধোঁয়া ওঠার জন্য। এরপর এক কাপ পেঁয়াজ কুচি আর এক চা চামচ রসুন কুচি দিয়ে ভাজতে শুরু করলেন। পেঁয়াজের মিষ্টি গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠল।
যখন পেঁয়াজ সোনালি হয়ে এল, তখন আদা-রসুন বাটা যোগ করলেন। সঙ্গে দিয়ে দিলেন হলুদ গুঁড়া আর মরিচ গুঁড়া। “এটা হলো মসলার জাদু,” মনে মনে ভাবলেন রত্না। এবার টমেটো কুচি আর তেজপাতা যোগ করে মসলা কষিয়ে নিলেন যতক্ষণ না তেল উপরে ভেসে আসে।
শুঁটকি ও শিমের বিচির বন্ধুত্ব
এবার শুঁটকির পালা। ধুয়ে রাখা ছুরি শুঁটকি মসলার মধ্যে ঢেলে দিলেন। একদম আস্তে আস্তে মসলা আর শুঁটকি মিশিয়ে নিলেন। এর পর সেদ্ধ করা শিমের বিচি যোগ করলেন। মনে হলো শুঁটকি আর শিমের বিচি একে অপরের বন্ধু হয়ে গেল।
মাঝারি আঁচে ধীরে ধীরে মেশানো খাবারে কিছুটা পানি ঢেলে দিলেন, যাতে মশলা ঠিকভাবে মিশে যায়। এবার লবণ চেখে দেখলেন। স্বাদ একদম পারফেক্ট!
শেষ ছোঁয়া
সব কিছু মাখামাখি হয়ে যাওয়ার পর রত্না কাঁচা মরিচ যোগ করলেন। ঢাকনা দিয়ে কড়াই ঢেকে রাখলেন দুই-তিন মিনিট। শেষমেশ ঢাকনা খুলে দেখলেন, শুঁটকি আর শিমের বিচি যেন একেবারে ভুনা ভুনা হয়ে গেছে। তেলের ঘ্রাণ আর মরিচের ঝাঁঝ মিলে মাখামাখি এক অসাধারণ গন্ধ বের হলো।
পরিবেশনের মুহূর্ত
রাতের খাবারের জন্য গরম ভাত পরিবেশন করলেন রত্না। পাশে শিমের বিচি দিয়ে ছুরি শুঁটকি। বাড়ির সবাই যেন খাবারের গন্ধে আরও ক্ষুধার্ত হয়ে উঠল। শ্বশুর বললেন, “বউমা, তোমার এই রান্নার কোনো তুলনা নেই!” রত্না হাসলেন, মনে মনে ভাবলেন—এটি কেবল রেসিপি নয়, এটি ভালোবাসা ও যত্নের গল্প।
এই ছিল শিমের বিচি দিয়ে ছুরি শুঁটকি ভুনার গল্প। আশা করি, আপনিও গল্পের মতো রান্নায় মজা পাবেন এবং পরিবারের সঙ্গে খাবারটি উপভোগ করবেন। 😊
Add comment