ট্র্যাডিশনাল শুঁটকি বানানোর ৩ টি সেরা রেসিপি
শুঁটকি মাছের নাম শুনলে অনেকের জিভে জল আসে, অনেকে আবার নাক সিটকোন। তা আপনার ভালো, খারাপ যাই লাগুক না কেন, অনেক খাদ্য রসিকের কাছে কিন্তু এর কদরই আলাদা। হ্যাঁ, অবশ্যই এর বানানোর অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। আর এই মাছ খাওয়ার পুরোনো ঐতিহ্যও আছে। মোদ্দা কথা হল, আজ আমরা এমনই ঐতিহ্যশালী শুঁটকি মাছের কিছু রেসিপির খবর দেবো। আসুন, দেখা যাক।
১. শুঁটকি মাছের ভর্তা
এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। লইট্যা শুঁটকি ভর্তা নামেও এটি পরিচিত। আসুন, দেখে নিই এটি বানানোর পদ্ধতি।
উপকরণ
শুঁটকির কাটা টুকরো ১৫-২০ টা, পেঁয়াজ কুচি ২ টো, প্রয়োজন মতো ধনে পাতা, রসুন কুচি ৭-৮ কোয়া, কতটা ঝাল খাবেন সেই অনুযায়ী কাঁচা লঙ্কা ও শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, সর্ষের তেল বেশী পরিমাণে, স্বাদ মতো নুন, হলুদ গুঁড়ো, প্রয়োজন মতো তেল।
পদ্ধতি
সবার প্রথমে আপনাকে শুঁটকি মাছ টুকরো করে কাটার পরে গরম জলে বেশ কিছুক্ষণ গরম করে নেবেন। তারপর ঠান্ডা জলে বেশ কয়েকবার ধুয়ে নেবেন। আসলে এই মাছের গায়ে প্রচুর ধুলো জমে থাকে। তাই যতক্ষণ না ধুলো পরিষ্কার হয়, ধুতে থাকুন। ভালো করে পরিষ্কার করে নেওয়ার পরে এবারে আসল রান্না শুরু করুন।
প্রথমে কড়াইয়ে পরিমাণ মত তেল নিন, এরপর ওই তেলে একে একে পেঁয়াজ, রসুন কুচি, কাঁচা লঙ্কা, প্রয়োজন মতো নুন, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিন। তবে শুঁটকি মাছ শুকোনোর সময় নুন ব্যবহার করা হয়। এই জন্য নুনের পরিমাণ নিয়ে সচেতন থাকুন। যতক্ষন না লালচে রঙ আসে, ভাজতে থাকুন। এরপর কড়াইয়ে শুঁটকিগুলো ছেড়ে দিন। এবারে হাতা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন। খানিক জল দিন কড়াইয়ে। তারপর আঁচ কমিয়ে কড়াইটি দশ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখুন। এরপর আবার ভালো করে হাতা দিয়ে নাড়াতে থাকুন। বাড়তি জলটা শুকিয়ে ফেলুন। তারপর ওপরে ধনে পাতা ছড়িয়ে দিয়ে আরো কিছুক্ষণ হাতা দিয়ে ঘেঁটে নিন। ব্যাস, আপনার শুঁটকির ভর্তা তৈরি। সাধারণত শুঁটকি ভর্তায় পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কা এগুলো বেশি ব্যবহার করা হয়, তবে আপনি আপনার স্বাদ অনুযায়ী পরিমাণ স্থির করে নিন।
২. শুঁটকি বাটা
উপকরণ
শুঁটকি মাছ ১৫-২০ টা, পেঁয়াজ ২ টো, রসুন ৭-৮ কোয়া, পরিমাণ মতো নুন, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো, গুঁড়ো হলুদ।
পদ্ধতি
প্রথমে শুঁটকি মাছ কেটে নিয়ে গরম জলে সেদ্ধ করার পর ঠান্ডা জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। এবারে কাঁটা বেছে ফেলুন। মাছগুলোকে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিন। এরপর আগে থেকে কেটে রাখা পেঁয়াজ, কাটা রসুন এগুলোকেও ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিন। মাছের পেস্টের সাথে এই পেস্টটিকে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবারে কড়াইয়ে বেশ খানিকটা তেল নিন। তেলটি গরম হওয়ার পরে তার মধ্যে এই মিশ্রণটি ঢেলে দিন। এবারে বেশ কিছুক্ষণ হাতা দিয়ে নেড়ে নেওয়ার পরে পরিমাণ মতো নুন দিন।
আরও কিছুক্ষণ হাতা দিয়ে ঘেঁটে নেওয়ার পরে স্বাদ বুঝে পরিমাণ মতো শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো দিন। তবে এ ক্ষেত্রে ঝাল একটু বেশী হলে বরং খেতে ভালোই লাগে। এরপর খানিকটা গুঁড়ো হলুদ দিন। এবারে পুরো জিনিসটা বেশ কিছুক্ষণ হাতা দিয়ে ঘাঁটতে থাকুন। বাড়তি তেল যেন না থাকে দেখবেন। আর কড়াইয়ের সাথে যাতে না আটকে ধরে, তাই শেষ পর্যন্ত আপনাকে হাতা দিয়ে ঘেঁটে যেতে হবে। ব্যাস, হয়ে গেলে নামিয়ে নিন আর চেখে দেখুন। আপনার শুঁটকি বাটা প্রস্তুত।
৩. বেগুন, আলু দিয়ে শুঁটকি
উপকরণ
শুঁটকি মাছ ২০ টুকরো, বেগুন অর্ধেক ডুমো ডুমো করে কাটা, আলু ১ টা ডুমো ডুমো করে কাটা, রসুন ৭-৮ টা কুচি করা , কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ বড় ১ টা কুচি করা, ধনে গুঁড়ো ১/২ চামচ, হলুদ গুঁড়ো, নুন, তেল।
পদ্ধতি
একটু বেশী করে তেল নিন কড়াইয়ে, গরম হলে তাতে পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কা এগুলো দিয়ে দিন। একইভাবে একটু লালচে রঙ এলে তাতে নুন দিয়ে নিন পরিমাণ মত। এরপর জল দিন। ধনে গুঁড়ো, হলুদের গুঁড়ো এগুলো দেওয়ার পর শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে মশলাটাকে ভালো মতো কষিয়ে নিন। কষানো হয়ে গেলে বেগুন আর আলু দিয়ে দিন কড়াইয়ে। এবারে ভালো করে হাতা দিয়ে নেড়ে নিন। তারপরে শুঁটকিটা দিয়ে দিন এর মধ্যে। তারপরে আঁচ হালকা করে দিয়ে ঢেকে রাখুন ও সেদ্ধ হতে দিন। মাঝে কয়েকবার ঢাকনা সরিয়ে দেখে নিন বেগুন, আলু এগুলো সেদ্ধ হল কিনা। হয়ে গিয়ে থাকলে নামিয়ে নিন। আপনার খাবার তৈরি।
বুঝতেই পারছেন খুব যে পরিশ্রম এতে করতে হবে তাও নয়। অনেক কম পরিশ্রমে যে কোনও দিন আপনি এই ট্র্যাডিশনাল রান্নাগুলো ঘরে বসে চেখে দেখতেই পারেন। তাই যান আজই বাজার থেকে কিনে আনুন শুঁটকি। আর সপরিবারে এর বিভিন্ন রেসিপি উপভোগ করুন।